মার্কেট বন্ধ থাকলেও বিকল্প পদ্ধতিতে চলছে বেচাকেনা

করোনা সংক্রমণের হার কমাতে ১ জুলাই থেকে দেশে কঠোর লকডাউন চলছে। দৈনিক সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা বাড়ার ফলে চলমান লকডাউন আরো এক সপ্তাহ বাড়িয়েছে সরকার। চলমান লকডাউনে দেশের সব মার্কেট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হলেও রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় বিকল্প পদ্ধতিতে বেচাকেনা করছেন দোকানিরা। এতে লকডাইন পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না।
 

গতকাল রাজধানীর সদরঘাট, ইসলামপুর, নবাবপুর, বংশাল, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, জুরাইন, লালবাগ, যাত্রাবাড়ী ঘুরে দেখা গেছে, বন্ধ মার্কেটেও চলছে কেনাবেচা। সরেজমিন দেখা যায়, বিভিন্ন মার্কেটের সামনে বিক্রেতারা সাধারণ মানুষের বেশে হাঁটাহাঁটি করেন। কাউকে দেখলেই ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, কী লাগবে?

নবাবপুর রোডে অবস্থিত বৃহৎ ইলেকট্রিক মার্কেটের একজন দোকানি প্রতিবেদককে দেখে কিছু লাগবে কিনা জানতে চাইলে প্রতিবেদক পাল্টা জানতে চান মার্কেট বন্ধ অবস্থায় কীভাবে পণ্য দেবেন? ওই দোকানি জানান, মার্কেট বন্ধ থাকলেও তারা দারোয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। ক্রেতা চাহিদা জানালে দারোয়ান গেট খুলে দেয়। তখন বিক্রেতা মার্কেটের ভেতরে গিয়ে নির্ধারিত পণ্য নিয়ে আসেন।

নারায়ণগঞ্জ থেকে কবির নামের এক ক্রেতা এসেছেন ভেন্টিলেটরের পাখা, এনার্জি লাইট ও অন্যান্য জিনিস কিনতে। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, আমার ছোট একটি ফ্যাক্টরি আছে। সেখানে কিছু জরুরি পণ্য দরকার পড়েছে। দোকানদারকে ফোন করলে তিনি মার্কেটে আসতে বলেন।

কবির নির্দিষ্ট পণ্য কেনেন মা ইলেকট্রনিকস থেকে। দোকানটির বিক্রয়কর্মী আনাস বলেন, সারা দিন দোকানের সামনে ঘোরাঘুরি করি। মানুষ এলে জিজ্ঞেস করি, কারো কিছু লাগলে দোকান খুলে এনে দিই। অনন্যা ইলেকট্রনিকসের স্বত্বাধিকারী রুবেল হোসেন বলেন, আগে তো দোকান বন্ধ রাখতাম। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। কাস্টমাররাও ফোন করে তাদের চাহিদার কথা বলছে। প্রথম কয়েকদিন অল্প কয়েকজন দোকানি এভাবে বিকল্প উপায়ে কেনাবেচা করলেও এখন প্রায় সব দোকানিকেই রাস্তায় দেখা যায়।

ইসলামপুরেও দেখা গেছে বন্ধ মার্কেটের সামনে দোকানিদের আনাগোনা। তবে তুলনামূলক কম ভিড় দেখা গেছে এখানে। তবু বেশ কয়েকটি গাড়ি থেকে কাপড় লোড ও আনলোড করার দৃশ্য চোখে পড়েছে। বংশাল মোটর পার্টস মার্কেটেও প্রচুর ভিড় দেখা গেছে। মোটরসাইকেল আরোহী কাউকে দেখলেই দোকানিরা এগিয়ে এসে প্রয়োজন কী জানতে চান। আদনান মোটরসের স্বত্বাধিকারী উত্পল বণিক বার্তাকে বলেন, লকডাউনের প্রভাবে আয়-রোজগার কমে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে তিনি পণ্য বিক্রি করছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, এভাবে দোকান করে দৈনন্দিন ব্যয়ও ওঠে না তাদের। তবু ঝুঁকি নিয়ে বিকল্প পদ্ধতিতে পণ্য বিক্রি করছেন। যাত্রাবাড়ীর ব্যবসায়ী মনিরুল বলেন, এর আগেও লকডাউনে অলিগলিতে দোকান খোলা ছিল। নির্ধারিত সময় শেষ হলে শাটার বন্ধ রেখে দোকান খোলা রাখেন দোকানিরা। 

এবারই প্রথম মার্কেটের দোকানগুলো বিকল্প পদ্ধতিতে খোলার প্রবণতা দেখা গেছে। এ ধরনের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। এতে করে লকডাউনের কার্যকারিতা হারানোর শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।  

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, নিত্যপণ্যের বাইরেও কিছু জরুরি পণ্য আছে যেগুলো না হলেই নয়। যেমন বাল্ব, ফ্যান, ফ্যানের রেগুলেটর, গ্যাসের চুলার চাবি ইত্যাদি। তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতারাই দোকানিকে অনুরোধ করে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য করেন। কারণ যার বাসার ফ্যান নষ্ট বা লাইট নষ্ট, তার কিন্তু এগুলো লাগবেই। সন্দেহ নেই, এসব দোকানি ও ক্রেতারা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছেন। কিন্তু এটি এমন এক বিষয়, যে বিষয়ে না আমরা নিষেধ করতে পারি, না উৎসাহিত করতে পারি। তবে এটা ঠিক রাজধানীর শপিং কমপ্লেক্সগুলোতে এ প্রবণতা নেই।